করোনা মহামারী সময়ে স্কুল বন্ধ রাখা ১৪টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ!

করোনা মহামারীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবার ক্ষতির পরিধি ও ব্যাপকতা এক নয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক সভ্যতার প্রধান ভিত্তি। করোনা এখানেই বেশি আঘাত হেনেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের ১৬ কোটিরও বেশি শিশুর স্কুল এক বছর ধরে পুরোপুরি বন্ধ। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এক বছর ধরে স্কুল বন্ধ রাখা ১৪টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। এ বছরের ৩ রা মার্চ জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) স্কুল বন্ধ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের ১৬ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি শিশুর স্কুল এক বছর ধরে পুরোপুরি বন্ধ৷ প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘‘বিশ্বব্যাপী ১৪টি দেশের বেশির ভাগ স্কুল গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। দেশগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ দক্ষিণ অ্যামেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের। এসব দেশে প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ স্কুলগামী শিশুর ওপর এর প্রভাব পড়েছে। এই ১৪ দেশের মধ্যে পানামাই সবচেয়ে বেশি দিন স্কুল বন্ধ রেখেছে।’’ পানামার পর এল সালভাদর, বাংলাদেশ ও বলিভিয়ার স্কুল বেশি দিন বন্ধ আছে। মার্চে স্কুল খুলে দেয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশে এখনো বন্ধ সব স্কুল। করোনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ব্রিটেন প্রথম ঢেউয়ের শুরুতেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা-ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। তারা প্রথমেই বুঝতে পেরেছিল এ দুর্যোগ সহজেই যাবে না। কেবল আমাদের নীতি নির্ধারকরাই বুঝতে পারেননি এবং অন্যদের দেশ থেকে কিছু শেখেনওনি।

স্কুলগুলো আবার খোলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রতি বিভিন্ন দেশের সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘প্যান্ডেমিক ক্লাসরুম’ উদ্বোধন করেছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেছেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী শিক্ষাক্ষেত্রে লকডাউন ভয়াবহ জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করেছে৷ যতই দিন যাচ্ছে, শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে ততই পিছিয়ে পড়ছে৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা শিশুদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে৷’’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষতি একদিকে যেমন ধীরগতি, অন্যদিকে তেমনই সুদূরপ্রসারী। আর তাই দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুদূরপ্রসারী প্রভাব হয়তো এখন আমরা পরিমাপ করতে পারছি না। তাই বলে এটা যে অনুপস্থিত, এমনটা ভাবার কোনো যুক্তি নেই। একটু ভাবুন তো, একটি স্কুলপড়ুয়া ছেলে বা মেয়ে কীভাবে দীর্ঘ ১৫ মাস পার করল। শহরে না হয় অনলাইনের কল্যাণে স্কুলের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা সংযুক্ত আছে। কিন্তু লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী যারা গ্রামে বসবাস করে, তাদের কথা কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছি? বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানেরা হয়তো আর স্কুলেই ফিরতে পারবে না। অনেকেই হয়তো উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের বেশির ভাগই মুঠোফোনসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়েছে। আর এর সামাজিক ক্ষতির দিকগুলো একটু ভাবুন তো? তারা স্কুলে ফিরলেও তাদের শিক্ষার মান কী রকম হবে, তা–ও সহজেই অনুমেয়। শিশুদের স্কুল বন্ধ রাখার পরিণতি ধ্বংসাত্মক বলে মনে করছে ইউনিসেফ৷ সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা এবং যারা দূরশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় না, তারা আর কখনো ক্লাসরুমে ফিরতে না পারার এবং এমনকি বাল্যবিয়ে বা শিশুশ্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউনেসকোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, পুরোপুরি ও আংশিকভাবে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বিশ্বব্যাপী ৮৮ কোটি ৮০ লাখের বেশি শিশুর পড়াশোনা অব্যাহতভাবে বাধার মুখে পড়েছে।
(তথ্যসূত্রঃ ইউনিসেফ ডটঅর্গ)

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
nuru.etv.news@gmail.com

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.